শনিবার, ১৫ মে, ২০১০
ঢাকাকে বদলাতে চাই উন্নত নগর পরিচালনব্যবস্থা
প্রায় ৪৭ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশিষ্ট নগর বিশেষজ্ঞ আর এল মায়ার (R. L. Meier) নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির এক তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে একটি শহর বা নগরকে Living Organism বা জীবের সঙ্গে তুলনা করেন। তাঁর মতে, একটি জীবের যেমন পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকে, তেমনি একটি শহর বা নগরের বিভিন্ন অংশ থাকে, যেগুলো নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এদিক থেকে মানবদেহের সঙ্গেও একটি নগরের তুলনা চলে। আমাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন—হাত, পা, নাক, মুখ, চোখ ইত্যাদির বিভিন্ন কাজ রয়েছে এবং এই কাজগুলো সংগঠিত হয় সমন্বয়ের মাধ্যমে। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আমাদের যখন খাবারের প্রয়োজন হয়, হেঁটে আমরা দোকানে যাই, চোখ দিয়ে খাবারটা ঠিক করি, নাক দিয়ে এর গুণাগুণ পরীক্ষা করি ও হাত দিয়ে বহন করে নিয়ে আসি। একইভাবে একটি শহর বা নগর তখনই বাসযোগ্য হয়, যখন এর আবাসিক এলাকার সঙ্গে সঙ্গে কাজকর্মের জন্য বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক বা শিল্প এলাকা থাকে, পড়ালেখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দ্রব্যসামগ্রীর জন্য শপিং এলাকা, অবসর সময়ের জন্য বিনোদন এলাকা এবং বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট থাকে। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের মাধ্যমে। তেমনি একটি নগরের বিভিন্ন অংশ নগরের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এবং নগরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যে মিথস্ক্রিয়া (interaction) তা ভারসাম্যপূর্ণ এবং সঠিক পর্যায়ে কি না তা নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরেরও একটি মস্তিষ্কের প্রয়োজন। এই মস্তিষ্ককে আমরা বলতে পারি নগর পরিচালনব্যবস্থা। যে নগরের পরিচালনব্যবস্থা যত উন্নত সে নগরের সমস্যাও তত কম।ঢাকা মহানগর মাত্র তিন দশকে (১৯৬১-৯১) একটি মাঝারি মানের শহর থেকে মেগাসিটিতে পরিণত হয়। ৫০ বছরে (১৯৫১-২০০১) ঢাকার লোকসংখ্যা বেড়েছে ২৫ গুণ এবং আয়তন বেড়েছে প্রায় ১৮ গুণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই মহানগরের সমস্যাও বেড়েছে সমান তালে। ঢাকা এখন সমস্যাসংকুল এক মহানগর। সমস্যার এই পাহাড় গড়ে ওঠার পেছনে যে বিষয়টির সবচেয়ে বড় অবদান তা হচ্ছে যথাযথ নগর পরিচালনব্যবস্থার অনুপস্থিতি। বিগত পাঁচ দশকে ঢাকার নগর পরিচালনব্যবস্থার গুণগত মানের পরিবর্তন তো হয়ইনি, বরং তার অবনতি হয়েছে।১৯৫৬ সালে টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী, ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) গঠিত হয়। তখনকার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নের দায়িত্ব পড়ে ডিআইটির ওপর। ডিআইটি পরিচালিত হতো একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। পদাধিকারবলে তত্কালীন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ মিউনিসিপ্যাল কমিটিদ্বয়ের চেয়ারম্যান, ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার এই বোর্ডের সদস্য ছিলেন। চেয়ারম্যান এবং আরও তিনজন সদস্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। নগর পরিকল্পনায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিও সদস্য মনোনীত হতেন। ডিআইটির বড় অর্জন হচ্ছে ১৯৫৯ সালের মহাপরিকল্পনা যা অনেকাংশে বাস্তবায়িত হয়েছে। ঢাকার মাত্র ১৭ লাখ বাসিন্দার কথা চিন্তা করে এই পরিকল্পনাটি প্রণীত হয়েছিল। এতে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও ঢাকা শহরকে কিছুটা হলেও মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে। কেননা এর পর আর কোনো মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের আমলে ডিআইটির স্থলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সৃষ্টি করা হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে আমলানির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রেষণে রাজউক বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত হন। রাজউক বোর্ডে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এটি ঢাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং এর কাজ মূলত ভূমি উন্নয়ন, প্লট বিতরণ ও হস্তান্তর, বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকা মহানগরের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বৃহত্তম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)। পাকিস্তান আমলের ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কমিটি স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে পরিণত হয় ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনে এবং ১৯৯০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন। পাকিস্তান আমলে যেটি ছিল একটি আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ আমলে তা পরিণত হয় একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানে। রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে সেবা প্রদান ছাড়া ঢাকা মহানগরের সমন্বিত পরিকল্পনা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডিসিসির তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই। কেননা পানি, বিদ্যুত্ ও গ্যাস সরবরাহ, পরিবহন সেবাদান এবং মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। কাজেই দেখা যাচ্ছে, ঢাকা মহানগরের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য কোনো ধরনের প্রক্রিয়া, ব্যবস্থা বা সংগঠনের অভাব রয়েছে। এর ফলে আমরা বিশৃঙ্খল নগর পরিচালনা এবং এমন এক অরাজক পরিস্থিতি দেখি, যা ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়নে বিরাট বাধা।বিশ্বের ইতিহাসে যেসব সভ্যতার খোঁজ পাওয়া গেছে, তাদের বেশির ভাগই নগরভিত্তিক। নগরের জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই এগুলোর উন্মেষ বা বিলুপ্তি ঘটেছে। যেখানে নগর পরিচালনব্যবস্থায় জনগণের সম্পৃক্ততা বেশি ছিল সেখানে নগরসভ্যতাও বেশি দিন টিকেছিল। আধুনিক যুগের মানুষ তথ্য-উপাত্ত ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ধারণায় উপনীত হয়েছে যে একটি জীবের মতো একটি নগরেরও জন্ম, প্রবৃদ্ধি, পতন বা মৃত্যু হতে পারে। একটি মানবশিশু যখন বেড়ে ওঠে তখন তার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। এর পেছনে একটি পরিকল্পনা কাজ করে। একটি নগর যখন বড় হতে থাকে তখন এর বিভিন্ন অংশও আনুপাতিক হারে বাড়ে, যদি এর কোনো পরিকল্পনা থাকে এবং পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হয়। একটি অপরিকল্পিত নগরের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি আনুপাতিক হারে নাও হতে পারে। যথাযথ নগর পরিচালনার মাধ্যমে একটি নগরের প্রবৃদ্ধিকে কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ করা সম্ভব, যদিও একটি পরিকল্পিত নগরের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নগর পরিচালনার মাধ্যমে যতটুক অর্জন করা সম্ভব, একটি অপরিকল্পিত নগরের ক্ষেত্রে ততটুকু সম্ভব নয়।নগর পরিচালনব্যবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় উপযুক্ত নগরপরিচালন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে। ভারতের বড় বড় নগর ও মেগাসিটিতে বিভিন্ন ধাপে উন্নত নগর পরিচালনব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং হচ্ছে। মেগাসিটি কলকাতায় কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (সিআইটি) ছিল প্রথম দিককার নগর পরিচালনব্যবস্থা। পরে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ১৯৭০ সালে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি সৃষ্টি করা হয় (সিএমডিএ বা কেএমডিএ)। তবে এতে জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। বৃহত্তর কলকাতার আয়তন ১৮৫৪ বর্গ কিলোমিটার এবং এতে ৪১টি নগর ও ১০০টি গ্রামীণ স্থানীয় সরকার রয়েছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গ মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং কমিটি অ্যাক্টের ধারা অনুযায়ী কলকাতা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মোট ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ৪০ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং ২০ জন সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য, যাঁরা বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। এই কমিটি অত্যন্ত শক্তিশালী। এর প্রধান একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং এই কমিটির তত্ত্বাবধানে কেএমডিএ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করে থাকে।ফিলিপাইনের রাজধানী মেট্রো ম্যানিলা ঢাকার মতোই একটি সমস্যাসংকুল মেগাসিটি। জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ও আয়তন ৬৩০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে ১৩টি নগর ও চারটি মিউনিসিপ্যালিটি। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকেই মেট্রো ম্যানিলার নগর পরিচালনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন নগর ও মিউনিসিপ্যালিটির মেয়ররা। তাঁরা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় বিধানের জন্য একটি লিগ গঠন করেন। তবে রাজধানীর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় ১৯৭৫ সালে এক রেফারেন্ডামের মাধ্যমে মেট্রো ম্যানিলা কমিশন গঠন করা হয়। এর সভাপতি ও কমিশনাররা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। এতে জনপ্রতিনিধিদের কোনো ভূমিকা না থাকায় ১৯৯৫ সালে এই কমিশন বিলুপ্ত করে ফিলিপাইন কংগ্রেসের এক অ্যাক্টের মাধ্যমে উচ্চক্ষমতার মেট্রো ম্যানিলা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মেট্রো ম্যানিলা কাউন্সিল হচ্ছে এই কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বডি। মেট্রো ম্যানিলার ১৭ জন মেয়র এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রধানেরা এই কাউন্সিলের সদস্য। তবে ভোটাধিকার রয়েছে কেবল মেয়রদের। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত হন। তাঁর পদমর্যাদা কেবিনেট মন্ত্রীর সমান। নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলোর ভূমিকা থাকায় মেট্রো ম্যানিলার সমন্বিত উন্নয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান নগর পরিচালন ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ।খণ্ডিত, বিচ্ছিন্ন ও জনগণের অংশীদারিবিহীন নগর পরিচালনব্যবস্থার কারণে ঢাকা মহানগরের অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। একটি উচ্চক্ষমতার, প্রতিনিধিত্বশীল, অংশীদারত্বমূলক, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ নগর পরিচালন ব্যবস্থা ছাড়া ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে না। এ উদ্দেশ্যে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তার কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো:ক. ঢাকার স্ট্রাকচার ও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান প্রণয়নের জন্য প্রায় ১৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজউকের আওতাধীন এই এলাকাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। এর নাম দেওয়া যেতে পারে ঢাকা মেট্রো এলাকা। এটি হবে রাজধানীর পরিকল্পনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ এলাকা।খ. সম্পূর্ণ ঢাকা মেট্রো এলাকাকে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য পৌরসভা যেগুলো এই এলাকায় রয়েছে সেগুলোকে এই বিশেষ এলাকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।গ. ঢাকা মেট্রো এলাকার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (ডিএমডিসি) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একজন সিনিয়র মন্ত্রীকে (পরিকল্পনা বা অর্থমন্ত্রী) এর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে এর ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা যেতে পারে। ঢাকা মেট্রো এলাকার সব সাংসদ ও পৌর মেয়ররাও ডিএমডিসির সদস্য হবেন। ঢাকার জন্য বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলো যেমন ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইত্যাদির প্রধানেরা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যেমন ভূমি, পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, যোগাযোগ ইত্যাদির প্রতিনিধিরাও ডিএমডিসির সদস্য হবেন। এই কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হবে ঢাকা মেট্রো এলাকার বর্তমান ও ভবিষ্যত্ প্রয়োজন ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, প্রয়োজনগুলো মিটানো ও সমস্যাগুলোর সমাধানের উদ্দেশ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা। ঘ. ডিএমডিসির একটি অফিস থাকবে এবং সচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকবেন।ঙ. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণরূপে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। এর নতুন নাম হবে ঢাকা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অথরিটি (ডিএমপিএ)। এর কাজ হবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ষমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন মনিটর করা। এর বোর্ড হবে প্রতিনিধিত্বশীল ও অংশীদারিমূলক। ঢাকা মেট্রো এলাকার সব পৌরসভা ও ডিসিসির প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা বা ব্যক্তিরা ডিএমপিএর বোর্ড সদস্য হবেন। এই প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণরূপে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। ডিএমডিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডিএমপিএর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করবেন।চ. ডিএমপিএ কর্তৃক প্রণীত এবং ডিএমডিসি কর্তৃক অনুমোদিত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং মেট্রো এলাকার সব পৌরসভাকে প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো মেট্রো এলাকার স্থানীয় সরকারগুলোকে সহায়তা প্রদান করবে। ঢাকা মেট্রো এলাকায় যথাযথ নগর পরিচালনব্যবস্থা প্রবর্তনের এটি হবে প্রথম ধাপ। ডিএমডিসির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এর কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যাগুলো চিহ্নিত এবং তা নিরসনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ঢাকা মেট্রো এলাকার নগর পরিচালন ব্যবস্থা ধাপে ধাপে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন